Breaking News

হোমনা প্রেস ক্লাবের বার্ষিক ভ্রমণ বিলাস

আব্দুল হক সরকার

গত ২৬ আগস্ট শুক্রবারে হোমনা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে ছিল সমুদ্র কন্যা খ্যাত কুয়াকাটায় ভ্রমন। ক্লাবের সকল সংবাদ কর্মীও সদস্যদের নিয়ে এ ভ্রমনের আয়োজন।এটাকে বার্ষিক ভ্রমন বিলাসও বলা চলে। মুলত বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম হোমনা উপজেলা শাখার নবগঠিত কমিটির অনুরুধে প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আঃ সালাম ভুইয়া, আমজাদ হোসেন সজল,কবি দেলোয়ার,রুহুল আমিন জুয়েল,সাংবাদিক হারুন অর রশিদ সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্ত ভ্রমনে গাড়ি ছাড়ার সময়
সকাল ৭ টায় দেয়া হলেও মুলত রওয়া হতে সাড়ে ৮ টা বেজে যায়। উপজেলা মসজিদের সহকারি ইমাম হাফেজ মাওলানা আঃ কুদ্দুস সাহেবের দোয়ার পর একে একে বাসে উঠতে শুরু করে।তবে সিনিয়রদের জন্য সামনে সিট রেখে যার যার আসন গ্রহন করার দৃশ্য দেখে অত্যন্ত ভাল লেগেছে আমার । তবে কয়েক জন্য সাংবাদিক সহকর্মী ভ্রমনে যেতে পারবে না জানার পর তাদের অভাব দারুন ভাবে অনুভব করি। ভ্রমনে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল হোমনা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এটিএম মোর্শেদুল ইসলাম শাজু,সাধারণ সম্পাদক মো.আক্তার হোসেন,থানা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. কামাল হোসেন,মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার কে। কিন্তু এদের মধ্যে কেহ অভিমান করে, কেহ অসুস্থ,কেহ জরুরী কাজ থাকায়, আমাদের সাথে সফর সঙ্গী হতে পারেনি। এদের মধ্যে সাংবাদিক আবুল কাশেম ভুইয়া ও মো.আইয়ুব আলী অসুস্থ ছিলেন, তবে আমাদের সাথে হোমনা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. কামরুজামান, দৈনিক সমকালের সাব এডিটর ও সাবেক প্রথম আলোর সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন ফারুক, হোমনা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি লায়ন কামাল উদ্দিন মাষ্টার, হোমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি লায়ন মো. হুমায়ুন কবির, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষনা পরিষদের সাধারন সম্পাদক উজ্জল চন্দ্র পোদ্দার,বিশিষ্ট ফুটবলার মো. হারুন অর রশিদ ও সিঙ্গার জীবন অংশ গ্রহন করে সকলের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিয়েছে।

সকাল সাড়ে ৮ টার সময়
হোমনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিন গেইটের রাস্তা থেকে ৫২ সীটের” তিশা গোল্ডেন “বাসে রওয়ানা হলাম অতিথি সহ আমরা ৩৮ জন। হোমনা থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় সামান্য কষ্ট হলেও যাত্রাবাড়ির পরে একটানে দুপুর ১২ টার মধ্যেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে পৌছে গেলাম। লৌহজং সিরাজদিখান হয়ে ফরিদপুর ভাঙ্গা না গেলে সরকারের উন্নয়নের রুপকথা অনুভব করা সম্ভব নয়।
আমাদের প্রোগ্রামে রুটিন ছিল, পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধানিবেদন পরে গুটিয়া মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করা। দুপুরের খাবার খেয়ে টেকের হাঠ ও বরিশাল হয়ে কুয়াকাটায় সূর্যোস্ত দেখা। কিন্ত পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ভাঙ্গারোডে না গিয়ে সরাসরি কুয়াকাটার রোডে চলে যায় প্রায় ১০০ কিলো মিটার। পরে টেকের হাট বাজার গিয়ে জানা যায় ভুল রাস্তায় চলে আসছি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে দুই গ্রুপ হয়ে যায়। একগ্রুপের দাবী সিডিউল ঠিক রাখা, আরেক গ্রুপের দাবী যেহেতু অনেক দুর চলে আসছে যাবার সময় বঙ্গবন্ধুর মাজার জেয়ারত করা হবে।

পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয় যাবার সময় বঙ্গবন্ধুর মাজরে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। দুপুরে
টেকের হাট এলাকায় এক মসজিদের জুম্মার নামাজ আদায় করে বরিশাল চলে যাই। বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে হোটেল কস্তরিতে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার বাসে উঠি। বিকাল ৫ টার দিকে কুয়াকাটায় পৌঁছি।
সেখানে সূর্যোস্ত দেখি। হাজার হাজার পর্যটকের ভীরে আমরা সবাই সমুদ্রের বীচে হারিয়ে যাই। পরবর্তীতে পর্যটন হোটেল উঠে, যার যার রুমে ফ্রেস হয়ে রাতে আবার বের হয়ে সমুদ্রের জোয়ারের দৃশ্য, আওয়াজ উপভোগ করতে সমুদ্র পারে চলে যাই। সেখানে সিঙ্গার জীবনে সঙ্গীত পরিবেশন ভ্রমন পিপাসুদের হৃদয়ে আনন্দের দুল খেলে যায়। শত শত পর্যটক আমাদের টিমের সঙ্গীত পরিবেশ উপভোগ করেন। সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য যন্ত্রপাতি আমাদের সঙ্গে ছিল।

রাতে কুয়াকাটার ঐতিহ্যবাহী রুটি দিয়ে মাছের বারবিকিউ, তন্দরী আমার নতুন অভিজ্ঞতা। হোটেল খাবারের মেনু – ভাতের সাথে মাছের নানা সুস্বাদু পদ, তুলার ডাডি, চিতল, টেংগা,রুপচাদা, টেক চাদা, পোটন, নোড়া বিল, অক্টোপাস, কাকড়া বাজি, সাথে লাউের প্যাকেজ খাবার। খাবার মেনু পর্যটকদের অর্থিক সীমার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মনে হলো।

‘রাতের খাবার শেষে আমরা সবাই সমুদ্র দর্শনে রওনা হলাম। সীবিচে ঢুকতে চোখে পড়ে জোয়ারে সমুদ্র উত্তাল বীচে কয়েক জাগায় বসার স্থান পেতে রেখেছে। যা ভাড়ায় পাওয়া যায়। ঘন্টায় ৫০/৬০ টাকা। জোয়ারে সময় সমুদ্রের দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব। রাত প্রায় ১২ টা! কেহই সমুদ্রে ছেড়ে হোটেল রুমে যেতে চাচ্ছে না। তবু আমাদের মূল টার্গেট বঙ্গবন্ধুর মাজারে যেতে হবে। সন্ধা ৫ টার পরে সেখানে ঢুকতে দিবে না। তাই যত সম্ভব তাড়া তাড়ি রওয়ানা হতে হবে। তাই সবাইকে রুমে চলে যেতে বাধ্য করি। সকালে কুয়াকাটার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দর্শন করতে হবে। ঝাউবন, লাল কাকড়ার বিচ, বৌদ্ধ মন্দর, শুটকি পল্লী, সুন্দরবন, সমুদ্রের ত্রি- মুহনা ইত্যাদি যার যার মত করে দেখারসিদ্ধান্ত হয়। পরক্ষনে জানতে পাই হোমনা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. ওয়াশিম তার কলেজ জীবনের বন্ধুদের সাথে কুয়াকাটা ভ্রমনে এসেছেন। তিনি একজন সদাহাস্যোজ্জল সোস্যাল ব্যক্তি তাঁর সাথে সাক্ষাত হওয়া আমাদের আনন্দের মাত্রা যেন আরো বেগবান হলো।
আমি ছিলাম হোটেল রনি তে ৩ জনের এসি রুম,সাথে টিভি এটাস্ট বাথরুম ভাড়া সাড়ে ১২ শ টাকা। রুমে আমি আমার ছেলে আরিফুল হক ও হোমনা সরকারি ডিগ্রি কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান সাংবাদিক ফেরদৌস আবদুল্লাহ। অনেক রাতে রুমে এসে কখন যে মুমিয়ে পড়েছি টেরই পাইনাই। কিন্ত ভোরে ফজর নামের পর সূর্যোদয় দেখতে হবে চলে গেলাম মটর সাইকে সূর্যোদয় দেখার স্থানে প্রায় ৯ কিলো মিটার পর্বদিকে সাগর পারে ঝাইবনের মধ্য দিয়ে গঙ্গারচর মোহনায় । পরবর্তীতে কুয়াকাটা সী-বীচে এসে সমুদ্র জলে স্নান করার ভাসনা নিয়ে ছেলেকে নিয়ে নেমে যাই জলে।
সমুদ্রে জোয়ার থাকায় পানির ঢেউ সমুদ্র সৈকত দর্শন সহ জোয়ার পানি গোসল করার মজা উপভোগ করলাম। কিন্তু এই বীচ আমাদের দলে আমার ছেলে ‘আরিফুল হক ছিল। সি বীচ এত ভাল লেগে গেল তার যে, সেখান থেকে কোনভাবেই তাকে উঠানো যাচ্ছিল না। এ দিকে ইন্টার নেটের কল্যাণে তার মা ভিডিও কলে এসে আমার উপর প্রেসার ক্রিয়েট করতে লাগলো যাতে তাকে বেশীক্ষন পানিতে থাকতে না দেই। পরবর্তীতে তাকে বুঝিয়ে পাড়ে তুলি।

রুমে গিয়ে গোসল করে প্রাতরাশ শেষে কামরুজ্জামান স্যার সহ সি বীচ ঘুরতে বেরুলাম। উত্তর দিকে সমুদ্রের ত্রি-মোহনার পথ ধরে জেলে পাড়া সংলগ্ন সি বীচ ঘুরে দেখলাম কিছুক্ষণ। সমুদ্র সহ চারিদিকের দৃশ্য আরো সজীব, আরো নয়নাভিরাম। একপর্যায়ে একটি রিসোর্ট মতো জাগায় মাছ ধরার নৌকার সামনে নেমে গেলাম।স্থানটি অপূর্ব সুন্দর সেখান কয়েকটি ছবি মোবাইলে ধারন করি।

সেখান থেকে চলে এসে হোটেল এসে ব্যাগ নিয়ে বের হই নাস্তা শরষ করে সবাইকে বাসে তোলার তাগদায় নেমে পড়লাম। কেন না ৫ টার পুর্বে বঙ্গবন্ধুর মাজারে প্রবেশ করতে হবে।

১১ টার সময় বাস ছাড়ার সময় দেয়া হলেও কয়েক জনের অপেক্ষা করে সাড়ে ১১ টার দিকে বাস ছেড়ে দেই টঙ্গিপাড়া জাতির পিতার মাজারের উদ্দেশ্যে। বরিশাল শহরে এসে খাবারের বিরতির পর রওয়ানা দিয়ে ফারি রাস্তা পেয়ে গেলাম। টেকের হাটের পর রাজৈর থেকে বাইপাস আঁকাবাকা সরু রাস্তা হয়ে শরিয়তপুর,মাদারী,ফরিদপুর,গোপাল গঞ্জ হয়ে প্রকৃতি দৃশ্য ও নতুন নতুন স্থান দর্শন করেতে করতে বিকাল ৪ টা নাগাদ আমাদের নির্ধারিত গন্তব্য জাতির জনকের মাজারে পৌঁছে গেলাম। সেখানে ফাতেহা পাঠ,পুস্পস্তবক অর্পন, দোয়া মোনাজাত শেষে বঙ্গবন্ধু যাদুঘরও লাইব্রেরী পরিদর্শন করি।আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মাজার ঐতিহাসিক এবং শিল্প ঐশ্বর্যে অতুলনীয়।

জাতির জনকের মাজারে যথেষ্ট সময় নিয়ে ঘুরাঘুরি করার সুযোগ পাওয়ায় হোমনা মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের নবগঠিত কমিটের পক্ষ থেকে আলাদা ভাবে মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয় সেখানে সবাই ফটোশেশনে অংশগ্রহন করে। সন্ধ্যায় সেখান থেকে ভাঙ্গা চৌরাস্তা হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। পথি মধ্যে ফরিদপুর সদর থানা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ(ওসি) মো. সাব্বির হোসেনের আমন্ত্রনে যাত্রাবিরতি করি। সেখানে তিনি আমাদের চা আপ্যায়ন করেন।
রাত ৯ টার দিকে ভাঙ্গা চৌরাস্তা অতিক্রম করি। ভাঙ্গায় সৌন্দর্য্য স্থাপত্য শিল্প, বর্ণিল প্রাচুর্যময় নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য দেখে সবাই মুগ্ধ। এ সময়
চলন্ত গাড়িতে ফাঁকে ভিডিও এবং ছবি তোলা হল। অধিকাংশ সদস্যের মোবাইলে কমবেশী রয়েছে এ ভ্রমনের ছবি ও ভিডিও। যা ভযিষ্যৎ প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করি
আমাদের ভ্রমণ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দর্শন, অবস্থানকে ত্রুটিহীন আনন্দপূর্ণ করার জন্য সকলের আন্তরিক প্রয়াসে আমি বিমোহিত। মনে হলো, সমুদ্রের মতই সবার মনমানষিকতা উদার, বর্ণিল এবং প্রাচুর্যময়।
আয়োজেনের ত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

About Darpan News24

Check Also

হোমনায় ফয়সাল হত্যা মামলায় দু’জনকে মৃত্যুদন্ড!

হোমনা( কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার হোমনায় বোনের সাথে প্রেম করার কারনে বোনের প্রেমিক মো. ফয়সাল নামে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *