হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানা সমস্যায় জর্জড়িত,চিকিৎসা সেবা ব্যহত
দর্পণ ডেস্ক রিপোর্ট:
কুমিল্লার হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানা সমস্যায় জর্জড়িত। ডাক্তার, নার্স , আয়া, মালি , কুক, মশালচি, নৈশ প্রহরী থেকে শুরু করে আবাসন সংকট রয়েছে প্রচুর। এ সমস্ত কারনে ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও শতভাগ সেবা পাচ্ছে না জনগন। বর্তমানে একটি একতলা ভবনে দু’জন চিকিৎসকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। দুটি ৩ তলা ভবন পরিত্যক্ত থাকায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউএইচএফপিও এবং আরএমও সহ দু’জন চিকিৎসকের বাসভবন থাকলেও সেখানে বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় কোনো চিকিৎসক থাকেন না।
জানাগেছে, ১৯৭৯ সালে হোমনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থাপনের পর স্টাফ ও চিকিৎসকদের থাকার জন্য দুইটি ৩ তলা ভবন তৈরি করা হয়। দীর্ঘ ৪৩ বছরেও নতুন কোন আবাসিক ভবন নির্মাণ না করার ফলে এখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বাইরে ঘরভাড়া করে থাকতে হয়। এতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নারী চিকিৎসকদের নাইট ডিউটির পর ঝুঁকি নিয়ে গভীর রাতে বাসায় ফিরতে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স রয়েছে ২৬ জন। নার্সদের আবাসনের জন একতলা বিশিষ্ট একটি ভবন থাকলে সেখান ২জন নার্স থাকতে পারে মাত্র বাকিরা বাহিরে ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারিদের জন্য নির্মিত ৩ তলা ভবনটি গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষনা করার কথা থাকলেও নতুন কোন ভবন নির্মান না করায় এ ভবনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তারা। এতে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
সরকার হোমনা উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জণবল সংকটের কারনে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় উপকরণ থাকলেও নার্সেদের মধ্যে গ্রুপিং, এনেসথেসিয়া ও সার্জিক্যাল কনসালটেন্ট না থাকায় কোন অপারেশনরহচ্ছে না। সিজারিয়ান রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাইতে যেতে হচ্ছে ঢাকা বা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা বে সরকারি ক্লিনিকে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শহীদ উল্লাহ বলেন, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হোমনা উপজেলা ছাড়াও মেঘনা ও বাঞ্ছারামপুর থেকে অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শত জন রোগীকে সেবা দিত হয়। চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ না থাকায় শতভাগ চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া আবাসন সংকটের কারনে বাহিরে ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। আমার নামে বাসা বরাদ্ধ থাকলেও সেখানে বসবাসের উপযুক্ত না থাকায় বাধ্য হয়েই বাহিরে থাকতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবদুছ ছালাম সিকদার জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নিত করা, আবাসিক ভবন নির্মান, বৈদ্যুতিক লাইন নির্মান, ষ্টোর,গ্যারেজ, সীমানা প্রাচীর,নির্মান সহ জনবল নিয়োজ দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর চাহিদা পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, জুনিয়র কনসালটেন্ট, সনোলজিস্ট এবং মেডিকেল অফিসারের ৮ টি , নার্সের ০৬টি ,তৃতীয় শ্রেণির১৯ টি, চতুর্থ শ্রেণির কুক, মশালচী, আয়া, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নকর্মী সহ ১৭ টি পদ শুন্য রহিয়াছে।
এ ছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্টের ১০ টি পদ থাকলেও আছেন মাত্র ৩ জন। ঝাড়ুদার ৫ জনের মধ্যে আছে ২ জন। ওয়ার্ড বয় ৩ জনের মধ্যে ১ জন। এমএলএসএস ৪ জনের মধ্যে আছে ২ জন। কুক মশালচি ২ জনের মধ্যে ১ জনও নেই। আয়া, মালি ও নৈশ প্রহরীর পদ থাকলেও কোনো জণবল নিয়োগ দেয়া হয়নি ওই সব পদে। এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন যাবৎ বিকল থাকায় যক্ষা বিভাগের এক্স রে দিয়ে সপ্তাহে একদিন এক্সরে করা হয়। এসব কারনে ইচ্ছা থাকলেও শতভাগ সেবা দেয়া যাচ্ছে না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লেখা লেখি করেও কোনো ফল হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে গেলে রোগী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ চিকিৎসা সেবা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে চিকিৎসকরা রোগীদের চেয়ে ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন বেশি। চিকিৎসা না দিয়ে জেলা সদরে স্থানান্তরই তাদের বেশি পছন্দ। এছাড়া জরুরী বিভাগে ব্রাদার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দ্বারাই ব্যবস্থাপত্র, সেলাই ও ড্রেসিংয়ের কাজ করানো হয়। ব্যবস্থাপত্র দেয়ার সময় ওষুধ কোম্পানীর লোকজন নির্দিষ্ট কোম্পানীর ওষুধ লিখতে জরুরী বিভাগে দায়িত্বরতদের প্রভাবিত করেন। ফলে রোগীর অভিভাবকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হন।
পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকায় টয়লেট থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়। রাতের বেলা বৈদ্যুতিক বাল্বের স্বল্পতার কারনে ভূতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে।এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউএইচএফপিও বলেন, হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছি। তবে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডাঃ আলীনুর বসির মুঠোফোনে যুগান্তরকে জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি। হোমনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী কিছু প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
Check Also
হোমনায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চিত্রাঙ্কণপ্রতিযোগীতায়মাইশা প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
মো. আবদুল হক সরকার//কুমিল্লার হোমনায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। মেহজাবীন …