![](https://darpannews24.com/wp-content/uploads/2023/12/20231222_235658-1024x576.jpg)
॥ আব্দুল হক সরকার॥
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন সারা দেশ বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত তখনও শক্রমুক্ত হতে পারেনি কুমিল্লা জেলার হোমন উপজেলা ঘাগুটিয়া গ্রামবাসী। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলার ঘাগুটিয়া গ্রামে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হন মুক্তিযোদ্ধাগণ।
অবশেষে ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাঞ্ছারামপুর, দাউদকান্দি, মুরাদনগর ও কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা ও যৌথ বাহিনীর ট্যাংক আক্রমণের পর সম্পূর্ণরূপে শক্রমুক্ত হয় ঘাগুটিয়া গ্রাম তথা কুমিল্লার হোমনা থানা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঘাগুটিয়া গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা সোবহান মিয়া বলেন জানান ১৪ ডিসেম্বর ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ক্যাম্প থেকে লঞ্চযোগে পালিয়ে যাচ্ছিল শতাধিক পাকিস্তানী সেনা সদস্য হোমনার ঘাগুটিয়া লঞ্চঘাটের অদূরে আসা মাত্রই বাঞ্ছারামপুর ও হোমনার মুক্তিসেনারা একযোগে আক্রমণ করে। নিরুপায় হয়ে পাকসেনারা ঘাগুটিয়া গ্রামের পাকা মসজিদে ( প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে)আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানী বাহিনী গ্রামে ঢুকেই মসজিদের সাথের সিদ্দিকুর রহমান দারোগা ও ভূঁইয়া বাড়িসহ গ্রামের ৪০/৫০ টি বাড়িতে আগুন দেয় এবং উপর্যুপরি গুলি চালায়।
পাকিস্তানী সেনাদের ভয়ে ঘাগুটিয়া ও ভবানীপুর গ্রামের লোকজন বাড়িঘর, সহায় সম্পত্তির মায়া ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী মাধবপুর, রামপুর ও নালাদক্ষিণ গ্রামে আশ্রয় নেয়। পরে হোমনা, বাঞ্ছারামপুর, মুরাদনগর ও দাউদকান্দির শতাধিক মুক্তিসেনা ঘাগুটিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়। কিন্ত তারা আত্মসমর্থন করছে না। পরে ২৩ ডিসেম্বর ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাঙ্ক নিয়ে আসা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় ঘাগুটিয়া মুক্ত হয়।
এদিকে ঘাগুটিয়া যুদ্ধে দুইজন মুক্তিযোদ্ধাসহ গ্রামের ২০ নারী-পুরুষ শহীদ হন এবং শতাধিক গ্রামবাসী ও এফএফ কমান্ডার আব্দুল আউয়ালসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এ যুদ্ধে আহত হন। পাকসেনাদের হাতে যারা শহীদ হলেন- সৈয়দ আলী প্রধান, কিসমত আলী প্রধান, আছমত আলী প্রধান, ছন্দু মিয়া, লাল মিয়া (লালা), দেওয়ান আলি ভূঁইয়া, জবা মিয়া, আমজত আলি হাজি (ভবানীপুর), কাশেম মিয়া (কাছম), খোরশেদ পাগলা, আইয়ুবের নেছা, মনজুরের নেছা, কালা মিয়া প্রধানের মা, হাওয়া, লালু মিয়া, গোলবরের নেছা, জাবেদ আলি, মুক্তিযোদ্ধা আলেক মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান মতি।
ঘাগুটিয়া গ্রামে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা ইতিহাসের কালের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে ঘাগুটিয়া জামে মসজিদটি। পরবর্তীতে ঐতিহাসিক মসজিদ ও স্কুলের পাশে গণকবরটি চিহ্নিত করে তা সংস্কার করা হয়েছে। এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় ২৩ ডিসেম্বর হোমনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ক্ষমালিকা চাকমা বলেন, দিবসটি উপলক্ষে উপজেলার দুলালপুর বাজার থেকে র্যালি করে, স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা মিলাদ করা হয়েছে ।