Breaking News

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা!

আজ ৫ অক্টোবর বুধবার বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৪ সাল থেকে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেসকোর উদ্যোগে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর এ দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। আজকের দিনে
জাতি গড়ার কারিগর সকল শিক্ষককে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান ও অভিনন্দন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন কর এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব-শিষ্টাচার শেখ। যার কাছে তোমরা জ্ঞান অর্জন কর, তাঁকে সম্মান কর।’
যার কাছে কোনো কিছু শেখা হয়, তিনিই মহান শিক্ষক। ইসলামে রয়েছে শিক্ষকের অনন্য মর্যাদা ও সম্মান।
একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার চেয়ে শিক্ষকের অবদান কোনো অংশে কম নয়। মুসলিম সমাজে শিক্ষক মাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। কারণ শিক্ষকরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। এক কথায় বলা যায়, শিক্ষক মানুষ চাষ করেন। যে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে নীতি-নৈতিকতা ও জীবনাদর্শের বলয়ে একজন শিক্ষার্থী তার ব্যক্তিগত ও কর্মময় জীবনকে মুখরিত করে। পাশাপাশি পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র তার দ্বারা উপকৃত হয়।

শিক্ষকই মানুষকে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। যে কথা বলেছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমাকে (তোমাদের) শিক্ষক হিসেবে পাঠানো হয়েছে।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক ও শিক্ষার ব্যাপকীকরণে সদা সচেষ্ট ছিলেন। তা ছিল এমন-
ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধের পর শিক্ষিত যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছিল তা থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বদরের যুদ্ধে যারা বন্দী হয়েছিলো, তাদের মুক্তির ব্যাপারে এরকম একটি সিদ্ধান্ত হয় যে- যারা যে বিষয়ে পারদর্শী, তারা সে বিষয়টি মদিনার শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে মুক্তি পাবে। যা বিশ্বের ইতিহাসে আজও বিরল ঘটনা।

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন এক বয়স্ক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এলে উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম নিজ স্থান থেকে সরে তাকে জায়গা করে দেন। তখন তিনি ইরশাদ করেন, ‘যারা ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করে না, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি)

শিক্ষকরা সমাজের বিবেক ও স্পন্দন। সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করার ব্যাপারে শিক্ষকদের অবিস্মরণীয় অবদান আজও এ ভূখণ্ডের মানুষ ভক্তিভরে স্মরণ করে। শিক্ষকরা হচ্ছেন দেশ গড়ার প্রধান নিয়ামক শক্তি। তাই ইসলামের আলোকে শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষাদানে তৈরি করে তুলতে হবে। জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজনে সুদূর চীন দেশে পর্যন্ত যেতে বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করো।’

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সময়ে সামাজিক দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকতার পেশাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ শিক্ষকতার পেশা অত্যন্ত মহান ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা। ইসলামের দৃষ্টিতেও শিক্ষকতা অতি সম্মানিত ও মহান পেশা।

শিক্ষকদের প্রতি সম্মান দেখানোর মাধ্যমেই তৈরি হয় আদর্শ সমাজ।

শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে; শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে।’ দেশব্যাপী শিক্ষকদের বৈধ অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা করা, শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি এবং শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা, সর্বোপরি দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করাই হোক আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আমাদের অঙ্গীকার।

মোঃ মনিরুল ইসলাম
প্রভাষক আরবি

চান্দেরচর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা হোমনা -কুমিল্লা.

About Darpan News24

Check Also

হোমনায় বাড়ি ফেরার পথে নৌকা ডুবিতে ২ স্কুলছাত্রী নিহত

হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধিকুমিল্লার হোমনায়স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে খেয়া নৌকা ডুবে দুই স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *