মো. আব্দুল হক সরকার
কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম এম কে আনোয়ার এর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারি একান্ত সচিব (এপিএস-২) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন খান। গত বুধবার( ২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮ টার দিকে হোমনার পারিবারিক কবরস্থানে মরহুম এমকে আনোয়ার এর কবরে পুস্পস্তবক অর্পন,ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন তিনি। এ সময় মরহুম এমকে আনোযারের ছেলে মাহমুদ আনোয়ার কায়জার সহ বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামে সাবেক যুবদল সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অসুস্থ্য আবদুল মোত্তালিব সরকারকে দেখতে যান। সেখানে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং উপস্থিত লোক জনের সাথে মতবিনিময় করেন।
জানাগেছে,কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম এম কে আনোয়ার এর মৃত্যুর পর এক সময়ের বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত হোমনা এবং তিতাস উপজেলায় অনেকটা নেতৃত্ব শূন্যতা হয়ে পড়ে। সে সময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধারনা ছিল এমকে আনোয়ার পুত্র মাহমুদ আনোয়ার কায়জার দলের হাল ধরবেন। কিন্ত তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে অনিহা প্রকাশ করেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস- ২ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন খান চাকুরীতে থাকায়
যোগ্য উত্তরসূরির অভাবে দলের হাল ধরেন দাউদকান্দির কৃতিসন্তান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্ল-১ও ২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। কিন্ত ফলাফল ভাল করতে পারেন নাই। কুমিল্লা-১ আসন দাউদকান্দিতে প্রতিযোগীতা হলেও হোমনা ও তিতাসে ফলাফল বিপর্যয় হায়েছে।( জামানত হারিয়েঝেন)
যদিও বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ সরকারের নীলনক্সা ও ভাড়াটিয়া তোকমা লাগার কারনে তার এ ফল বিপর্যয়ের কারন অর্থাৎ পরিকল্পিত ভাবে তাকে হারানো হয়েছিল।
পরবর্তীতে হোমনা ও তিতাস উপজেলায় বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে গ্রুপিং এ জড়িয়ে পড়ে তৃণমূল নেতা কর্মীরা। তিতাস উপজেলার সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার চলে যায় বিদেশে আর হোমনা উপজেলার সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মোল্লা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার পর তিতাসে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হলেও হোমনা উপজেলায় এখনো কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে দলের সহ সভাপতি জহিরুল হক জহর।
এ ছাড়া হোমনা পৌর বিএনপি কমিটিতে সাবেকদের বহাল রেখা কমিটি পুনগঠন করা হয়েছে। এতে করে দলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্ঠি হচ্ছে না। ফলে নেতৃত্বের অভাবে একদিকে আন্দোলন অপর দিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে রয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন করলে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কে তা স্পষ্ট নয়।
হোমনা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহফুজুল ইসলাম রাজনীতিতে নিস্ক্রিয়।
এমতাবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে মরহুম এম কে আনোয়ারের ছেলে মাহমুদ আনোয়ার কাইজার পিতার স্থলাভিষিক্ত হবেন? অথবা তিতাসের কৃতি সন্তান সাবেক প্রধান মন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারি একান্ত সচিব এপিএস-২ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন খান দলের হাল ধরবেন এমন প্রত্যাশা করছে সাধারণ জনগন। তবে এমকে আনোয়ার পুত্র মাহমুদ আনোয়ার কায়জার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন এমন আবাস পাওয়া যাচ্ছে না।
এ দিকে বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস-২ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন খান তার চাকুরী জীবন শেষ করে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফিস্টুন দেয়ায় দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া ৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার তিতাস উপজেলার মাছিমপুর গ্রামে তাার নিজ বাস ভবনে সংবাদ সম্মেলন তিনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবেনএবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহন করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন করলে হোমনা তিতাস আসনে বিএনপি থেকে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন না পাইলে যে মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষ কাজ করবেন।
তিনি আরো বলেন হোমনা-তিতাসের অভিভাবক ছিলেন মরহুম এম কে আনোয়ার, এলাকার উন্নয়নই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য। তার প্রতি এলাকার মানুষের ভালোবাসাও ছিল অপরিসীম। যে কোন মূল্যে এই ভালোবাসা ধরে রাখতে হবে। মরহুম এম কে আনোয়ার যতবার নির্বাচন করেছেন ততবাই বিজয়ী হয়েছেন। মরহুম এম কে আনোয়ারের পরবর্তী নেতা কে হবেন তা জনগণই ঠিক করবেন। আমি নেতা হতে চাই না আমি একজন কর্মী হিসেবে এলাকাবাসির পাশে থাকতে চাই।এ নিয়ে দলে যাতে কোন বিভক্তির সৃষ্টি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশ নায়ক তারেক রহমান যে নির্দেশনা দেবেন দলের স্বার্থে তা সবাইকে মেনে নিতে হবে।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস -২ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন খান রাজনীতিতে আসলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে তিনি মনোনয়ন পাবেন এমন আলোচনা চলছে জোরেশোরে। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে প্রধান মন্ত্রী দপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্প দেখা শোনা করতেন। সরাসরি রাজনীতিতে না থাকলেও নেপথ্য থেকে বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন ।
এ দিকে মরহুম এম কে আনোয়ার এর এ শূন্যতা পূরণ করতে আনোয়ার পুত্র মাহমুদ আনোয়ার কায়জার অথবা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন খান রাজনীতিতে আসছেন এমন আবাস পেয়ে নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসছেন।
সম্ভাব্য দুই নেতা একই সময়ে একই সাথে মরহুম এমকে আনোয়ার এর কবর জিয়ারত করার মধ্যদিয়ে জনগনের নিকট এ বার্তা দিতে চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বচনে দুই জনের মধ্যে যে কোন এক জন বিএনপির হাল ধরতে প্রস্তুত। তবে মাহমুদ আনোয়ার বা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মদিন খান যে কোন একজন বিএনপির হাল ধরোক এমন প্রত্যাশা তৃণমূল নেতাদের।
এ দিকে আগামী নির্বাচনে মাহমুদ আনোয়ার (কায়জার) প্রার্থী না হলে বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস-২ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন খান এ আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে দলে ব্যাপক আলোচনা চলছে ।