মো.হারুন অর রশিদ, বিশেষ প্রতিনিধি
এক সময় গ্রামগঞ্জের ছেলে মেয়েরা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধুলায় অভ্যস্থ্ ছিল। তারা অবসর সময় ছেলে-মেয়েরা দলবেধে খেলতে যেত গ্রামের খোলা মাঠে। পুকুর ঝাপ দিয়ে গোসল করা সহ শৈশবে দুরন্তপনায় জড়িয়ে থাকতো বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে।
কিন্তু আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এ সব জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলাধুলা। পাড়া মহল্লাতে তেমন একটা চোখে পড়ে না শিশু-কিশোরদের এক সময়ের জনপ্রিয় মজার খেলাধূলা। কানামাছি বৌ বৌ, হাঁ-ডু-ডু, লাটিম খেলা, পাক্ষি খেলা, দাড়িয়া বান্ধা,গোল্লাছুট, ঢাংগুলি ( টেমঢাং) মারবেল, হাঁসধরা, রশিটানা, ইচিং-বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, মল্ল যুদ্ধ, লাঠিখেলা, লুকোচুরি, কক ফাইট (মোরগ লড়াই), কড়ি, ধাপ্পা, কুতকুত, বিস্কুট খেলা, যেমন খুশি তেমন সাঁজ, পুতুলের বিয়ে, চড়ই -ভাতি, এলাডিং বেলাডিং, সাত চাড়া উল্লেখযোগ্য খেলার ।
এক সময় দুপুর ঘনিয়ে যখন বিকেল হতো একটু ফাকা জায়গা পেলেই বিশেষ করে আমবাগানে কাছামাছি, বৌছি, হা-ডু-ডু, গোল্লাছোট, দাড়িয়াবান্ধা কিংবা ঢাংগুলি খেলায় মেতে উঠত। সন্ধ্যা হলে খেলা ধূলায় মত্ত শিশু কিশোর নিজ নিজ বাসার চলে যেত হারিকেন বা কুপির আলোতে পড়তে বসতো। সেই সময় ক্রিকেট তো দুরের কথা একক ভাবে ফুটবল কেনা ছিল বিশাল ব্যাপার। দুই দলের খেলোয়ারা চাঁদা তুলে প্রথম পুরষ্কার একটা আয়না এবং দ্বিতীয় পুরষ্কার একটা চিরুনি দিয়ে দুই দলের মধ্যে জমজমাট ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হতো।
ছোট বয়সে চাচাত ফুফাত,মামতো ভাইবোন, বন্ধু-বান্ধব, মিলে পরন্ত বিকালে ও জ্যোস্না রাতে গোল্লাছুট, হাঁ-ডু-ডু ও দাঁড়িয়াবান্ধা খেলাগুলো কথা মনের গহিনে এখনো নাড়া দেয়।
এ ছাড়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বিয়ের গান, ছেলে-মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে উভয় বাড়িতে ৩/৪দিন ধরে চলতো মা চাচিদের বিয়ের গান। বিয়ের আসরে বরপক্ষ আর কনে পক্ষের মধ্যে চলতো কথার লড়াই। বসতো পুথিঁপাঠের আসর। কিন্ত দিন বদলের পালায় গ্রামাঞ্চলে সেই ঐতিহ্য আর নেই।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে সেই সময় কার গ্রামীণ ঐতিহ্য। নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো এখন শুধুই গল্প। আবার এসব খেলার নাম শুনে অনেকেই হাসে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই খেলাধুলা বাদ দিয়ে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া কোথাও খেলার মাঠ, পতিত জায়গা, বাড়ির ওঠানও আগের মতো নেই। সেই কারণে সামাজিক অবক্ষয় ও তরুণরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে ঐহিত্যবাহী লোক-সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দেয়া প্রয়োজন। যাতে আধুনিককালে তারা এই গ্রামীণ ঐতিহ্য বুকে লালন করতে পারে।
বিশিষ্ট জনের অভিমত সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খেলা ধূলার চর্চা বাড়ানো উচিৎ। এতে মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা ও গ্রামীণ খেলা ধূলাকে বাঁচাতে সচেতন বিত্তবান ব্যক্তিরাও এগিয়ে আসলে খেলা ধূলার অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।