মো.আবদুল হক সরকার
আজ ২৩ ডিসেম্বর হোমনা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন সারা দেশ বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত তখনও শক্রমুক্ত হতে পারেনি কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলা তথা ঘাগুটিয়া। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলার ঘাগুটিয়া গ্রামে পাক বাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত ছিল হোমনা,মুরাদনগর,দাউদকান্দি ও বাঞ্ছারামপুরের মুক্তিযোদ্ধারা।
অবশেষে বিজয়ের ৮ দিনপর ২৩ ডিসেম্বর বাঞ্ছারামপুর, দাউদকান্দি, মুরাদনগর ও কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা ও যৌথ বাহিনীর ট্যাংক আক্রমণের পর শক্রমুক্ত হয় ঘাগুটিয়া গ্রাম তথা কুমিল্লার হোমনা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঘাগুটিয়া গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা সোবহান মিয়া যুগান্তরকে জানান, বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর সকালে সূর্যোদয়ের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর ক্যাম্প থেকে শতাধিক পাকসেনা লঞ্চযোগে পালিয়ে যাচ্ছিল। হোমনার ঘাগুটিয়া লঞ্চঘাটের অদূরে আসামাত্রই বাঞ্ছারামপুর ও হোমনার মুক্তিসেনারা তাদের উপর আক্রমণ করে।পরে পাকসেনারা ঘাগুটিয়া পাকা মসজিদে আশ্রয় নেয় এবং মসজিদের পাশে সিদ্দিকুর রহমান দারোগা ও ভূঁইয়া বাড়িসহ আশেপাশের ৪০/৫০ টি বাড়িতে আগুন দেয় এবং উপর্যুপরি গুলি চালায়।ফলে ঘাগুটিয়া ও ভবানীপুর গ্রামের অধিবাসীরা বাড়িঘর, সহায় সম্পত্তি ফেলে পার্শ্ববর্তী মাধবপুর, রামপুর ও নালাদক্ষিণ গ্রামে আশ্রয় নেয়। পরে হোমনা, মুরাদনগর ও দাউদকান্দির শতাধিক মুক্তিসেনা ঘাগুটিয়া যুদ্ধে অংশ গ্রহন করলেও পাকসেনারা আত্মসমর্থন করেনি।
পরবর্তীতে কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাঙ্ক নিয়ে আসা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় ঘাগুটিয়া মুক্ত হয়।
ঘাগুটিয়া যুদ্ধে ২জন মুক্তিযোদ্ধাসহ গ্রামের ২০ নারী-পুরুষ শহীদ হন এবং শতাধিক গ্রামবাসী ও এফএফ কমান্ডার আব্দুল আউয়ালসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলো বীরমুক্তিযুদ্ধা অলেক মিয়া ও মতিউর রহমান। অন্যরা হলো সৈয়দ আলী প্রধান, কিসমত আলী প্রধান, আছমত আলী প্রধান, ছন্দু মিয়া, লাল মিয়া (লালা), দেওয়ান আলি ভূঁইয়া, জবা মিয়া, আমজত আলি হাজি (ভবানীপুর), কাশেম মিয়া (কাছম), খোরশেদ পাগলা, আইয়ুবের নেছা, মনজুরের নেছা, কালা মিয়া প্রধানের মা, হাওয়া বিবি, লালু মিয়া, গোলবরের নেছা, জাবেদ আলি।
ঘাগুটিয়া গ্রামে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের কালের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে ঘাগুটিয়া জামে মসজিদটি। পরবর্তীতে ঐতিহাসিক মসজিদ ও স্কুলের পাশে গণকবর চিহ্নিত করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে।
আজ হোমনা হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে হোমনা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের যৌথ আয়োজনে বিজয় র্যালি শেষে স্মৃতিস্তম্ভেপুস্পস্তবক অর্পন বড় ঘাগুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বীরমুক্তিযুদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।