আব্দুল হক সরকার
দেশে স্মার্ট ফোনের ব্যবহার যেমন বেড়েছে তেমনি অপব্যবহার ও করছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা স্মার্ট ফোনে আসক্তির কারণে পড়ার টেবিলে পড়তে না বসে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছে। মোবাইল ফোনে আসক্তির কারণে শিক্ষার্থীরা লেখা পড়া অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছে। উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা রাস্তা-ঘাটে ও মাঠে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলছে, ফেইজবুক, টিকটক সহ অনলাইন জুয়া খেলতে ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে।এটি মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, করোনা কালীন সময়ে অনলাইন ক্লাশেরর নামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্ট মোবাইল ফোন চলে যায়। এর পর থেকে ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
বলাচলে করোনার সময় বাধ্যতামূলক ভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলেদেয় অভিভাবকগণ। এরই ধারাবাহিকতায় মোবাইলে পারদর্শি হয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা না করে গেমস খেলে, ইন্টারনেটে পর্ণ সাইট দেখে বিপথগামী ও মেধা শুন্য হয়ে পড়ছে ।ফলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে।
কিন্ত মাদকের ব্যাপারে আইন থাকলেও মোবাইলের ব্যাপারে কিন্ত কোন বাধানিষেধ নেই। শত চেষ্টা করেও তা বন্ধকরা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সন্তানদের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে অভিভাবকগণ শংকিত হয়ে পড়ছেন।
বিভিন্ন সভা- সমাবেশ, সেমিনার, সেম্পোজিয়ামে এর ক্ষতিকারক দিক নিয়ে আলোচনা হলেও তার সুফল সমাজে বেশী প্রতিফলন হচ্ছে না। এর কারন হিসাবে বিশেষজ্ঞজন মনে করেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠোপোশকতা ছাড়া এ আশু ভয়াবহ বিপদ থেকে পরিত্রান বা ভাল ফলাফল আশা করা সম্ভব নয়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া সংসদ সদস্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ প্রানগোপাল দত্তের এক বক্তব্যে জানাযায়, স্মার্টফোন থেকে যে নীল রেডিয়েশন ছড়ায়, তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি মস্তিষ্ক বিকাশেও মারাত্বক ক্ষতি করে। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে পড়াশুনায় অমনোযোগী, মেজাজ খিটখিটে, ক্ষুুধামন্দাসহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া স্মার্টফোন ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের মেধাশক্তি কমে যাচ্ছে। এর ব্যবহার এভাবে বাড়তে থাকলে জাতি মেধাশুন্য হয়ে যাবে। এ স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ফলে নতুন প্রজন্মকে মেধাশূণ্য জাতিতে পরিনত করবে।
এ দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক জরিপে দেখাগেছে, ক্লাসে যারা ভাল ফলাফল করে তাদের অনেকেই স্মার্টফোন ব্যবহার করে না বা সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় মেধাবীরা স্মার্টফোন ব্যবহার কম করে। কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে বর্তমানে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর উপহার হিসাবে টেব ( স্মার্টফোন) ক্লাশের মেধাবীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ফলে এক জন মেধাবী শিক্ষার্থী দিনে সাত থেকে আট ঘন্টা বা তারও বেশি সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এখন প্রশ্ন একজন শিক্ষার্থী এ ভাবে যদি মোবাইল ফোনের পিছনে সময় দেয়, তাহলে পড়ালেখা করার সময় কোথায়? শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে উত্তরণের উপায় কি?
এখন সবার আগে আমাদের ভাবতে হবে রাস্ট্র এ বিষয়ে কি ভাবছে? অনলাইন শিক্ষার নামে করোনা কালীন সময় যে ভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেয়া হয়েছে সেইভাবে দেশে আইন করে আবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেই ফোন ফিরিয়ে নিতে হবে।
মোবাইল ফোনের আশক্তি থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজে বের করতে না পারলে এর প্রভাব পড়বে গোটা জাতির উপর। স্বপ্নের সোনার বাংলা আর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে।
এক গবেষনায় দেখাগেছে স্মার্টফোনের সুবিধা থাকলেও এটি ব্যবহারের উপর নির্ভর করছে এর ভাল মন্দ। অতিমাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মনোযোগ নষ্ট করে দেয়। এতে এমন ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে, যা মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়ঙ্কর। এর ফলে শারিরীক ও মানষিক সমস্যার পাশা পাশি ব্রেইন স্টোক ও হার্ট এ্যাটাকের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
এমতাবস্থায় যে কোন মূল্যে শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি করতে পারলে এর আসক্তি থেকে শিক্ষার্থীরা মুক্তি পাবে। এর জন্য সবার আগে অভিভাবকদের মাঝে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে আগ্রহী করে তুলতে হবে। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। এতে অভিভাবকদের গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে। সন্তানদের শিক্ষার পাশা পাশি নৈতিক শিক্ষাসহ তাদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরন ও সময় দিতে হবে। তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথীবি ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠন করতে হলে শিশুদের এ স্মার্ট ফোনের অপব্যবহার কমানোর কোন বিকল্প নেই।