হোমনা( কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
হোমনায় জোরপূর্বক অন্যের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। হোমনা উপজেলার ঘারমোড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফতেরকান্দি গ্রামের মো. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে।
গত মঙ্গলবার(১৩ ফেব্রুয়ারি) ও বৃহস্পতিবার(১৫ ফেব্রয়ারী) একই গ্রামের ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও হোমনা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, ঘারমোড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট দুই বছর যাবৎ নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের নামে ড্রেজার বসিয়ে মধুকূপি নদী খনন করে খননকৃত বালু বিভিন্ন ব্যাক্তির নিকট বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
ড্রেজিং এর পানি সরানোর জন্য আবদুল্লাহ আল মামুন নামের এক ব্যক্তির নাল জমি ( দাগনং-৫৭৪৬) ব্যবহার করার জন্য চুক্তি হয়। এতে তার জমিতে পলিমাটি জমা হয়ে কিছু জমি ভরাট হয়। কিন্ত বালু ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বালু সরানোর নাম করে ভুক্তভোগীর জমি থেকে ১০/১২ ফুট গভীর করে মাটি কেটে বিক্রি করা শুরু করে। সে প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট বালু বিক্রির লোভে ডিজাইন বহি;ভূত ভাবে মধুকুপি নদী থেকে বালু উত্তোলন করার কারনে নদীর পাড়ের ব্যক্তি মালিকানার অনেক ফসলি জমি নদীতে ভেঙ্গে পড়েছে।
হোমনা রেহানা মজিদ মহিলা কলেজের প্রভাষক নারায়নপুর গ্রামের এস এম শাহীন জানান, এ বালু সিন্ডিকেট ড্রেজার দিয়ে গভীর করে নদী থেকে মাটি উত্তোলনের কারণে আমার নিজস্ব ৩০ শতাংশ জমি নদীতে ভেঙে পড়ছে। এর কোন ক্ষতি পুরণ বা বিচার পাইনি।
এ দিকে বালুমহাল ব্যবস্থাপনা সরকারি বিধি মোতাবেক নদী খননের বালু এক স্থানে স্তপ করে রেখে উপজেলা বালু ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইউএনও ‘র তত্ত্বাবধানে নিলামের পর সর্বোচ্চ দরদাতা সেই বালু বিক্রি করতে পারবেন। কিন্ত এ বালুর বেলায় কোন ধরনের নিয়ম মানা হয়নি।
এলাকাবাসির অভিযোগ মো. মনিরুজ্জামান সাবেক সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরীর অনুসারি হওয়ায় নদী খননের বালু অবৈধ ভাবে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি । পরবর্তীতে বালু বিক্রির টাকার হিসাব নিয়ে বিরোধ হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে চলে যান। স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ জয়লাভ করলে এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে আবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা শুরু করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুনের নিজস্ব জমি (দাগ নং-৫৭৪৬) থেকে ১০/১৫ জন লেভার দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টর দিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে আওয়ামীলীগ নেতা মো. মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে জানান, এটি মামুনের জমি না। তাঁর ভাই ডাঃ নোমানের জমি ভরাট করেছি। তিনি মারা যাওয়ায় টাকা না দেওয়ায় মাটি অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছি। তার সাথে আমার কোন চুক্তি হয় নাই। তবু সে চাইলে পত্তন হিসাবে ভাগের টাকা পাইতে পারে।
নদী খননের মাটি তিনি বিক্রি করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে ঢাকা থেকে এসে কথা বলবো বলে মোবাইল কেটে দেন।
এ বিষয়ে ওসি মো. জয়নাল আবেদীন জানান, অভিযোগ পেয়ে ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তবে জমি এবং বালু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি এসিল্যান্ড ও ইউএনও স্যারের। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে ফয়সালা করার জন্য মৌখিক ভাবে বলে এসেছে পুলিশ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছি। বিনানুমতিতে অন্যের জমি থেকে মাটি কাটা অন্যায়। তা ছাড়া নদীখননের মাটি নিলাম ছাড়া বিক্রির কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ বলেছেন, আমার কাছে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোন স্থান নেই। আমি দুর্নীতি করবো না কাউকে করতেও দিবো না। কেহ আমার নাম ব্যবহার করে অন্যায় করতে চাইলে আমাকে জানাতে হবে। এ বিষয়ে ওসি কে বলেছি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে।