হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার ৯২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বরাদ্দকৃত স্লিপ ফান্ড (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান) থেকে নানা কৌশলে ১২ লাখ টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তিনজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তারা হলেন মো. নজরুল ইসলাম, খাদিজা আক্তার ও মো. আনিসুর রহমান। এর মধ্যে খাদিজা আক্তার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বদলী হয়েছে।
সূত্র জানায়, করোনাকাল থেকে এসব কর্মকর্তারা ক্লাস্টার ভিত্তিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) হিসেবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একই ব্যক্তি যখন মনিটরিং অফিসার ও সভাপতির দায়িত্বে থাকেন, তখন কার্যত কোনো জবাবদিহিতা থাকে না। এই সুযোগে প্রধান শিক্ষকদের চাপে রেখে স্লিপ ফান্ডের টাকা হরিলুট করে আসছেন অভিযুক্ত কর্মকর্তারা।
২০২৩ সাল থেকে উপজেলায় মূল্যায়ন পরীক্ষার যাবতীয় খরচ স্লিপ ফান্ড থেকে মেটানো হয়। কিন্তু সেখানে প্রতিটি পরীক্ষার্থীর জন্য প্রশ্নপত্র বাবদ ৩৬ টাকা ধার্য করা হয়, যা অন্যান্য উপজেলায় ১০ থেকে ১২ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর ফলে প্রতি পরীক্ষার্থী বাবদ গড়ে ২৪ টাকা বেশি নেয়া হয়েছে।
হোমনা উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে এই মূল্যায়ন পরীক্ষায়। হিসাব অনুযায়ী ৫টি পরীক্ষায় মোট ১২ লাখ টাকা অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে, যা সরাসরি দুর্নীতি নয় লুটপাটের পর্যায়ে পড়ে।
এছাড়া অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা শুধু স্লিপ ফান্ড নয়, বরং রুটিন মেইনটেনেন্স, ওয়াশ ব্লক, ক্ষুদ্র মেরামত, দিবস পালন ও প্রাক-প্রাথমিক উপকরণ বিতরণসহ নানা খাতের বরাদ্দ থেকেও কমিশন বানিজ্যে লিপ্ত ছিলেন। যেসব শিক্ষক প্রতিবাদ করেছেন, তাদের শোকজ ও বদলির ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একাধিক প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণের খাবারের টাকা, ভাতা, বার্ষিক ক্রীড়ার খরচ তাদের থেকে নেয়া হলেও তা যথাযথভাবে খরচ হয়নি। এমনকি সরকারি বই গোপনে কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসায় বিক্রি করার অভিযোগও উঠেছে।
এটিও নজরুল ইসলাম ও খাদিজা আক্তার ও মো. আনিসুর রহমান প্রশ্নপত্র বাবদ ৩৬ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করলেও বাকি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এটি আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।” তাদের দাবী-প্রশ্নপত্র প্রেসে ছাপা হয়নি, ফটোকপি করা হয়েছে, তাই খরচ বেশি হয়েছে।” তবে একসেব প্রশ্ন ফটোকপি করতে সর্বোচ্চ ১২ টাকার বেশী হওয়ার কথা নয় বাকি ২৪ টাকার কোথায় খরচ হয়েছে জানতে চাইলে সে বিষয়ে কোন জবাব দেন নাই।
হোমনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাহার সুলতানা বলেন, “আমি নতুন যোগদান করেছি। স্লিপ ফান্ডের খরচ আগের নিয়ম মত হয়েছে। কোন অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল যুগান্তরকে বলেন, মৌখিক “অভিযোগ শুনেছি, তবে এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
শিক্ষা খাতের এই সমস্ত দুর্নীতি বন্ধ ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে স্বচ্ছ তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ছাত্র শিক্ষক ও সচেতন এলাকাবাসী।
Check Also
হোমনায় তারেক রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে বিএনপির পদবঞ্চিত গ্রুপের বিশাল শোডাউন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত
হোমনা( কুমিল্লা) প্রতিনিধিকুমিল্লার হোমনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে বিএনপির পদবঞ্চিত …