মেঘনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার মেঘনায় বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে নিজাম নামের ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত হয়েছেন এবং অন্তত আরও ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন- মো. আনিস সরকার (১৮), টিটু সরকার (২৮), সুমন আহমেদ (২৫), দেলোয়ার হোসেন (২৮), ইব্রাহিম খলিল (৩০), রমজান হোসেন (৩৫), শাকিল আহমেদ (২২), মো. হানিফ (৪৫), খালেদ হাসান (১৯) ও মো. ওয়াসিম (৩৫)। নিহত নিজাম
চালিয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ভাই ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।
জানা গেছে, বালু ব্যবসার পাওনা টাকা এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বছরখানেক আগে থেকেই স্থানীয় ঠিকাদার নিহত নিজাম ও জেলা পরিষদের সদস্য ও শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের উপজেলা সভাপতি কাইয়ুম হোসেনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে নিজাম ও কাইয়ুমের সমর্থকদের মধ্যে মাঝে মধ্যেই ঝামেলা লেগে থাকত।
তা ছাড়া নিজাম কাইয়ুমের কাছে ১ কোটি টাকা পাওনা টাকার জন্য চাপ সৃষ্ঠি করলে কাইয়ুম এলাকায় ছাড়া হয়। পরবর্তীতে কুমিল্লা -২ আসন পূন বিন্যাস হলে কাইয়ুম এলাকায় আসে।
স্থানীয়রা জানান, নিজাম ও কাইয়ুমের দ্বন্দ্ব মিটানোর জন্য থানায় সালিশ বসত। কিন্তু পুলিশের মধ্যস্থতায়ও উত্তেজনা কমেনি।
গতকাল সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে চালিভাঙ্গা বাগবাজারের পার্শ্ববর্তী ফরাজিয়া কান্দি সড়ক দিয়ে আসার সময় টেঁটা ভল্লম সহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিহত নিজামের ওপর হামলা চালায় কাইয়ুম ও তাঁর লোকজন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় অন্তত ১১ জনকে টেটা বিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিজামকে মৃত ঘোষণা করেন।
চালিয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, নিজাম আমার ছোট ভাই। সে কাইয়ুমের কাছে অনেক টাকা পাইত। সেই টাকা না দিয়ে কাইয়ুম ও তার লোকজন পরিকল্পিত ভাবে আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। আমি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নিহতের স্ত্রী সালমা আক্তার বলেন, নিজাম কাইয়ুমের নিকট অনেক টাকা পাইতো াওনা টাকা চাওয়াতে এদের মধ্যে বিরোধ হয়। এর জেরে আজ সকালে ফরাজিয়া কান্দি সড়ক দিয়ে আসার সময় টেঁটা ভল্লম সহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিজামের ওপর হামলা চালায় কাইয়ুম ও তাঁর লোকজন।এতে নিজাম নিহত হয়। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।
মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলম বলেন, নিজাম খুবই ভালো ছেলে ছিল। তাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কে কোন দলের, তা বিবেচনায় নেওয়া যাবে না। অপরাধীর সঙ্গে দলের সম্পর্ক থাকতে পারে না। তা ছাড়া কাইয়ুম একজনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয় হয়ে উঠেছে।
ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানান, নিজামের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। আহতরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
এ দিকে ঘটনার পর পরই গা-ঢাকা দিয়েছেন কাইয়ুম। তাঁর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। তাঁর স্বজনরাও কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
মেঘনা থানার এসআই মিলন বলেন, নিজাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে বিভিন্নস্থান থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেনু কাইয়ুমের বাবা ইউপি সদস্য আবদুল কাদের, তাঁর বড় ভাই মো. দাইয়ান,সমর্থক আরিফ হোসেন ও সোহেল মিয়া।
মেঘনা থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিজাম খুনের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আমাদের একাধিক টিম মাঠে আছে। এলাকার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।