হারুন অর রশিদ
হোমনা কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
গ্রামগুলোতে আর শোনা যাচ্ছে না পাখির কিচির শব্দ। এক সময়ে গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ঘাটে, বন-জঙ্গলে, গাছে গাছে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ নানা ধরনের পাখির দেখা মিলত। কিন্তু কালের আবর্তে চিরচেনা সেই পাখিদের কিচিরমিচির সুর এখন আর তেমন একটা শোনা যায় না। পাখির কলরবে মুখর গ্রামের মেঠো পথ এখন একেবারেই পাখিশূন্য হতে চলেছে। একটা সময় ছিল প্রকৃতির যেদিকে চোখ যেত সেই দিকের বনে-জঙ্গলে গাছে গাছে হরেক রকমের পাখি দেখা মিলত। জাকে জাকে পাখি দেখার সেই অপরূপ দৃশ্যপট দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে।দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতির সাথে জড়িত সেসব পাখির ডাক ও সুর মানুষকে মুগ্ধ করত, সেই পাখিই ক্রমান্বয়ই হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষ করে দোয়েল পাখির এখন আর দেখাই মিলছে না প্রকৃতিতে।
প্রকাৃতিতে বিকাল ঘনিয়ে যখন সন্ধ্যা নেমে আসত সেই বাঁশ -ঝাড়ের পাশ দিয়ে চলাচলের সময় পাখির কিচির মিচির শব্দে মনটা ভরে যেত। ছোট বেলায় রাস্তার ধারে যখন হাটতাম বিশেষ করে ডুমুর গাছের পাতা দেখা যেত টুনটুনি পাখির বাসা। গ্রামের প্রায় ঘরের চালের কোনায় দেখা যেত চড়ুই পাখির বাসা। তালগাছ জুড়ে দেখা দেখা মিল বাবুই পাখির বাসা।
আধুনিকায়নের ফলে নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র ও খাদ্য সঙ্কট আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে দোয়েল-শালিকসহ দেশিয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।নতুন প্রজন্ম আগের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে পায় না। তাছাড়া শিকারিদের দৌরাত্ম্যে পাখিশূন্য হয়ে পড়ছে বনাঞ্চল।
হোমনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল হক সরকার বলেন, কয়েক বছর আগেও গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙাতো নানান রকম পাখির কিচির মিচির ডাকে। পাখির কলকাকলিতেই বলে দিত এখন সকাল, শুরু হতো দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা। কিন্তু এখন যেন পাখির ডাক হারিয়ে গেছে কোথায় যেন, এখন গাছ-গাছালিতে তেমন একটা পাখির দেখা মিলেনা। আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও শিল্পচর্চার সাথে পাখির যে যোগ, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
সরেজমিনে হোমনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রবীনদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, পাখির কিচিরমিচির শব্দে শিহরণ জাগানো সেই সুর-শব্দ এখন আর তেমন শোনা যায় না। সকাল দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশ-ঝাড়, আমবাগান, বাড়ির ছাদে যেসব পাখি এক সময় দেখা যেত সেই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না। তবে টিয়া, ঘুঘু, কাক, বক, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি পাখি শহর ও গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর চোখে পড়ে না। তাই পাখি প্রিয় অনেক সৌখিন মানুষের বাড়ির খাচায় বন্দি করে পাখি পালন করতে দেখা যায়।
পাখির আবাসস্থল গাছ কাটার প্রভাব, ফসলি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, বনাঞ্চল উজাড়, পাখি শিকার, পাখির মাংসের ব্যবসা ইত্যাদি কারণে অনেক পাখিই এখন বিলুপ্তির পথে বলে মনে করছেন সমাজের সচেতন মানুষরা। বিভিন্ন মৌসুমে পাখি শিকার এবং পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে অনেক পাখিই চলে যাচ্ছে অন্যত্র। অথচ প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ প্রকৃতি প্রেমীদের।