Breaking News

কুমিল্লা-২ ( হোমনা-মেঘনা)আসনে আলোচনায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী, জামাতের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন মোল্লা!



আবদুল হক সরকার//
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকলেও কুমিল্লা -২ (হোমনা- মেঘনা)) আসনে সংসদ-সদস্য পদে বিভিন্ন দলের আগ্রহী প্রার্থীরা মাঠে কাজ শুরু করেছেন। খেলাধূলা, ওয়াজ মাহফিলে অংশগ্রহন সহ সামাজিক মাধ্যমে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে তাদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছে।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে কুমিল্লা-২ আসনের ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। জুলাই বিপ্লবে পটপরিবর্তনের পর দেশে একটি অবাদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং জনগন যোগ্য প্রার্থীকে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন সেই প্রত্যাশায় বুক বেঁধে আছেন।

কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে হোমনা ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) আসন। ২০২৩ সালের ভোটার হালনাগাদ অনুযায়ী যার ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮২ হাজার ৬৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৮১ জন এবং মহিলা -১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮১ জন। এ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এম.কে আনোয়ার পাঁচ বার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী থাকার কারনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে ফলে এ আসনটি বিএনপির ঘাটি হিসাবে পরিচিত। তবে ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তিন মেয়াদে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা পেশীশক্তি ব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট চালিয়ে নিজেদের আখের ঘুছিয়েছেন। অন্য দিকে বিরোধী দলের রাজনীতি ধ্বংস করার লক্ষে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে রাজনীতির মাঠকে কুলসিত করেছে।
জানাগেছে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এ আসন থেকে ১৯৭৩ সালে মোজাফর আলী( নৌকা), পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে মুর্তুজা হোসেন মোল্লা( ধানের শীষ) এর পর জাতীয় পার্টি থেকে এ্যাড. মোবারক আলী ( লাঙ্গল) প্রতীক নিয়ে ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিনা ভোটে জোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির আলহ্জ্ব মো. আমির হোসেন ভূইয়া এমপি’র দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর আমলে রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালভার্ডসহ অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হয়েছে। ব্যক্তি হিসাবে তাঁর আচার আচরন সকলের নিকট গ্রহনযোগ্য হলেও তার দলের কিছু নেতা আওয়ামীলীগের লোকজনের সাথে মিলে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে তিনি বিতর্কিত হন। হোমনা কলেজ সরকারি করণ ও কলেজের শিক্ষক নিয়োগ, কলেজের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রাইমারী স্কুলের দপ্তরী নিয়োগে অর্থবানিজ্যের অভিযোগ এর মধ্যে অন্যতম।

এ দিকে ২০১৮ সালে রাতের ভোটে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সেলিমা আহমাদ মেরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পাঁচ বছরে দলীয় গ্রুপিং ছাড়া দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন কাজ করতে পারেনি। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, বাস স্ট্যান্ড,সিএনজি স্ট্যান্ড ও ঘারমোড়া গরু বাজার ইজারা সহ সরকারি বরাদ্ধ ভাগভাটোয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পরবর্তীতে ২০২৪ সালে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পরও গণ রোষে তিনি পরাজিত হন।

অপর দিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জুলাই বিপ্লবে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। কিন্ত তিনি তাঁর ৭ মাসের শাসনামলে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, এডিপি বরাদ্ধ, বিভিন্ন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বির্তকিত হন।

এমতাবস্থায় জুলাই বিপ্লবে পট পরিবর্তনের পর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা স্পষ্ট না। অংশ গ্রহন করতে পারলেও তেমন সুবিধা করতে পারবে না বলে ধারনা করে আওয়ামীলীগের অনেক নেতা আত্মগোপনে আছেন।

এ দিকে আওয়ামীলীগের দোষর জাতীয় পার্টিরও কোন কর্মকান্ড নেই। জাতীয় নাগরিক পার্টির কোন কমিটি নেই। বর্তমানে বিএনপি,বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম , ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট,সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আগ্রহী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। আর এই প্রস্তুতিতে এগিয়ে আছে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

কুমিল্লা-২(হোমনা- মেঘনা) আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম শুনাযাচ্ছে।তাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূইয়া, বিএনপির চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস -২ জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সাবেক উপ সচিব ইঞ্জিনিয়ার এম এ মতিন খান, সাবেক মন্ত্রী মরহুম এম.কে আনোয়ার পুত্র মাহমুদ আনোয়ার কাইজার, হোমনা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক,ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডিশনাল পিপি কুমিল্লা জজ কোর্ট এ্যাড. আজিজুর রহমান মোল্লা, যুক্তরাজ্য জিয়া পরিষদের সহ সভাপতি মো. মনোয়ার সরকার ও বনও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজোয়ান সিদ্দিকের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক লিটুর নাম শোনা যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, বিএনপি, বাংলাদেশ জামাতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন ছাড়া কোন দলই নির্বাচনী মাঠে নেই।

ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। তবে বর্তমানে তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য থাকায় বিএনপির মনোনয়নের দিক থেকে তাঁর নাম তেমন আলোচনায় নাই।

অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূইয়া: এই মূহুর্তে বিএনপির দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূইয়া। তিনি শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হিসাবে বেশ পরিচিত। তা ছাড়া হোমনা ও মেঘনার বর্তমান উপজেলার বিএনপি ও ইউনিয়ন কমিটি তার নিয়ন্ত্রনে ফলে সাংগঠনিক ভাবে তিনি বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। একতরফা ভাবে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কমিটি বানিজ্য ও আওয়ামীলীগ প্রীতি ইত্যাদী অভিযোগ করে দলের একটি বড় অংশ তাকে অসহযোগীতা করে আসছে। দলী্য কোন্দলে সম্মেলনের ৩ মাস পরেও পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারছে না।

ইঞ্জিনিয়ার এম এ মতিন খাঁন; এ দিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস-২ জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সাবেক উপ সচিব ইঞ্জিনিয়ার এম এ মতিন খান সাংগঠনিক ভাবে পদ পদবী না থাকলেও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে বেশ সক্রিয়। তিনিও এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে ইঞ্জিনিয়ার এম এ মতিন খান প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস থাকাকালীন সময় হোমনা,মেঘনা ও তিতাস উপজেলায় উন্নয়ন মূলক কাজে মরহুম এমকে আনোয়ার ও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কে সার্বিক সহযোগীতা করেছেন এবং তাঁর চেষ্টায় অনেক বেকার ছেলে মেয়েদের চাকুরী হয়েছে। ওনার বাড়ি তিতাস উপজেলায় হলেও তার নানা বাড়ি হোমনা উপজেলার জয়পুর গ্রামে। তিনি হোমনা উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচীতে অংশনগ্রহন করেন। তা ছাড়া নতুন করে আসন পূর্নবিন্যাসেরর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদি হোমনার সাথে তিতাস উপজেলা সংযুক্ত হয় তাহলে মনোনয়ন ও নির্বাচনের ক্ষেত্র উনি অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন।
মাহমুদ আনোয়ার কাইজার: অপর দিকে সাবেক মন্ত্রী মরহুম এম কে আনোয়ারের ছেলে মাহমুদ আনোয়ার কাইজার রাজনীতি বা নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। তবে বিএনপির একটি অংশ মনে করেন তিনি অভিমান করে রাজনীতি থেকে দুরে রয়েছেন। অবশেষ তিনি রাজনীতিতে আসবেন। উনি যদি রাজনীতিতে আসেন তাহলে তাঁর পিতার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে দলীয় মনোনয়ন ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন বলে বিএনপি একটি অংশ মনে করেন।

আবু বকর সিদ্দিক লিটু: বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উপদেষ্টা সৈয়দা রেজোয়ান সিদ্দিকের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক লিটু কে নিয়ে জনগনের মাঝে নতুন করে কৌতহল সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন তিনি ও নির্বাচনে আসতে পারেন এবং বিএনপি থেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তদারকি করায় জনগনের মধ্যে এ ধরনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

এ্যাড. মো. আজিজুর রহমান মোল্লা :হোমনা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও হোমনা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাড. মো. আজিজুর রহমান মোল্লা কে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে কুমিল্লার জজ কোর্টের এডিশনাল পিপি মনোনীত করেছেন। তিনি নিজকে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দাবী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারনা চালাচ্ছে।তার দাবী দলের দু:সময়ে দলের হাল ধরেছি,দলে সঠিক মূল্যায়ন হলে মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনি ও একজন দাবীদার।

মো. মনোয়ার সরকার: যুক্তরাজ্য জিয়া পরিষদের সহ- সভাপতি মনোয়ার সরকার জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন,শীতবস্ত্র বিতরণ, খেলাধুলার আয়োজন, ইফতার পার্ট আয়োজন করে বেশ আলোচনায় এসেছেন। এ আসন থেকে তিনি ও মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে দলের মনোনয়ন যে পাবে তিনি তার পক্ষে কাজ করবেন।

মো. নাজিম উদ্দিন মোল্লা:অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়তে ইসলাম তাদের প্রার্থী ঘোষনা করেছেন। বাংলাদেশ জামাতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মজলিসে সূরা সদস্য ঢাকা উত্তরের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল নাজিম উদ্দীন মোল্লাকে। তবে এই আসনে জামাতে ইসলামের সাংগঠনিক ভিত্তি দিন দিন মজবুত হচ্ছে। তা ছাড়া বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়ার বাড়ি ও নাজিম উদ্দিন মোল্লার বাড়ি মেঘনা উপজেলায়।

ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলাম: পীর সাহেব চরমোনাইয়ের সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারী জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম ও কুমিল্লা পশ্চিমের সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম। তবে নির্বাচনের জোরালো প্রচারনা না থাকলেও মাঝে মধ্যে পথ সভা করে মাঠে রয়েছেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির কোন কমিটি নেই ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী কার্যক্রম আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে না।

তবে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দেশি- বিদেশি লবিং,দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে সু সম্পর্ক, তৃনমুলের মতামত দলের প্রার্থী নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। সেই লক্ষ নিয়ে
প্রার্থীরা দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন।


About Darpan News24

Check Also

বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ভিপি মান্নান আর নেই

বিশেষ প্রতিনিধিবাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্রসংসদের প্রথম নির্বাচিত সহসভাপতি( ভিপি) ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *