কুমিল্লা-২( হোমনা- তিতাস) আসনে সংসদ নির্বাচন নিয়ে উত্তাপ না থাকলেও বিএনপির মনোনয়ন পেতে অর্ধডজন প্রার্থীর দৌঁড় ঝাপ!
আবদুল হক সরকার।।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সারাদেশে উত্তাপ ছড়ালেও উত্তাপ নেই কুমিল্লা-২ আসনে। ইতোমধ্যে আসন পুনবিন্যাস নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে তিনটি রীট পিটিশন চলমান। এ রীট পিটিশনের ফলাফলের উপর অনেকটা নির্ভর করবে প্রার্থী মনোনয়ন।
বিএনপির দূর্গহিসাবে খ্যাত এ আসনে দলীয় কোন্দল,আসন পূনবিন্যাস নিয়ে জটিলতা সব মিলিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা বিরাজ করছে।
বিএনপির হাইকমান্ডের কোন প্রার্থীর পক্ষে সবুজ সংকেত না পাওয়ায় যোগ্য-অযোগ্য সবাই নিজেকে প্রার্থী দাবি করে প্রায় অর্ধডজন প্রার্থী হিসাবে মাঠে দৌঁড়ঝাপের শুরু করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজায় মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন, কোন কোন প্রার্থী ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করছেন, অনেকে খেলাধূলা সহ সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।
জানাগেছে,এ আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মরহুম এম.কে আনোয়ার পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বানিজ্য,নৌ পরিবহন, কৃষি ও শিল্প মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ছিলেন৷ অথচ তাঁর ইন্তেকালের পর এ আসনে হাল ধরার মত কোন নেতা ছিল না। ফলে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লা,-১ ও ২ আসন থেকে নির্বাচন করেন। বর্তমানে তিনি শারিরীক ভাবে অসুস্থ্য।
অপর দিকে কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়ার বাড়ি মেঘনা উপজেলায়। কুমিল্লা -২ আসনে হোমনা উপজেলার সাথে মেঘনা উপজেলা থাকা কালীন সময়ে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে তার নাম শুনা গেলেও আসন পুন:বিন্যাসের ফলে মেঘনা উপজেলা দাউদকান্দি উপজেলার সাথে সংযুক্ত হওয়ায় কুমিল্লা অঞ্চলের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া ও ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুই কেন্দ্রীয় নেতা কুমিল্লা -১ আসনের বাসিন্দা।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানাগেছে,
কুমিল্লা-২( হোমনা- তিতাস) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজার ৯১৭ জন। কেন্দ্রের সংখ্যা ১০৯ টি । ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হোমনা ও তিতাস উপজেলার অর্ধডজন নেতা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি দাবীকরে ফেইজবুক পোষ্ট দিচ্ছেন। আবার কেহ নিজস্ব কর্মীনিয়ে গণ সংযোগ ও শো ডাউন করে কেন্দ্রী্য নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন।
এদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রাক্তন এপিএস-২ সাবেক সচিব ইঞ্জিনিয়ার এম এ মতিন খান রয়েছে আলোচনার শীর্ষে। পূজামণ্ডপ পরিদর্শন,সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন বিশেষ করে কুমিল্লা-২( হোমনা – তিতাস) আসন পুন বিন্যাসের পর আলোচনায় শীর্ষে চলে আসেন তিনি।
এ ছাড়া কুমিল্লা (উ:) জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. আক্তারুজ্জামান সরকার বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে পূজামণ্ডপে শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ সহ গণসংযোগ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এদিকে হোমনা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. আজিজুর রহমান মোল্লা ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দাবীকরে ফেইজবুকে ঝড় তোলেছেন। ত্রয়োদশ নির্বাচনে এ আসন পুনউদ্ধারে তার কোন বিকল্প নেই বলে দাবী তার অনুসারীদের।
এদিকে যুক্তরাজ্য জিয়া পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোয়ার সরকারও আরাফাত রহমান কিকোর নাম ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন,শীতবস্র বিতরণ, ইফতার পার্টর আয়োজন করে মাঠে সরব রয়েছেন।
এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত তিতুমীর সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও নবীনগর সরকারি কলেজের অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাশেদুল হক নিশাত ও দৌলতপুর বাজারে অফিস নিয়ে ফেইজবুকে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাকসুদা আক্তার রিমা সাবেক মন্ত্রী মরহুম এম.কে আনোয়ারের কবর জিয়ারত করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। তিনি উপজেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলা সদরে গণ সংযোগ করে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করেছেন।
অপর দিকে সাবেক মন্ত্রী মরহুম এম কে আনোয়ারের মেয়ে খাদিজা আনোয়ার প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আগামী ২৪ অক্টোবর তার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ঘোষনা আসতে পারে বলে অনেকে ধারনা করছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মজলিসে সূরা সদস্য ঢাকা উত্তরের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মো. নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কুমিল্লা পশ্চিমের সভাপতি মাও. তাজুল ইসলামকে প্রার্থী ঘোষনা করেছেন। তারা উভয়ে মাঠে প্রচারনা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, জাকের পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট, বাম জোটসহ ছোটখাটো অন্য দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীর তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।
সাধারণ ভোটারদের সাথে আলোচনা করে জানাগেছে, তার বিশ্বাস এবারের নির্বাচন অবাদ ও সুষ্ঠু হবে। পেশী শক্তির কোন প্রভাব থাকবে না। এতে সৎ ও শিক্ষিত, যোগ্য ও জনবান্ধব, ক্লিন ইমেজদাবী, ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দিলে যত বড় দলের নেতাই হউক না কেন ফলাফল বিপর্যয় ঘটতে পারে।