সম্পাদকীয়
দেশের উত্তরাঞ্চলের মত চলছে শৈত্যপ্রবাহ । কনকনে শীতে জবুথবু সাধারণ মানুষ। তাপমাত্রা নেমে গেছে ১১ ডিগ্রির নিচে। ঘন কুয়াশা আর প্রকট শৈত্য প্রবাহে সাধারণত দিনের বেলায় যে তাপমাত্রা থাকে, তার চেয়ে দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কম তাপমাত্রা থাকে।
ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। তাদের তো কাজে যেতেই হবে। প্রকৃতির নিয়মেই ঋতুর পালাবদল ঘটে। প্রকৃতির আচরণ নিয়ন্ত্রণের সাধ্য মানুষের নেই। এলাকার উন্নতি নিয়ে যত কথাই বলা হোক না কেন স্বীকার করতে হবে শীতে সাধারণ মানুষকে সত্যিই জীবন সংগ্রাম করতে হচ্ছে। হতদরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সূর্য ওঠার আগেই কাজের খোঁজে বের হতে হয়। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় গরীব জনমানুষের অসহায়ত্বকে আরও প্রকট করে তোলে। শীতের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষায় হতদরিদ্র অনেক মানুষেরই নেই ন্যূনতম শীতবস্ত্র, খাদ্যদ্রব্য, ওষুধপথ্য। শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অসহনীয় শীতে তাদের কাউকে খোলা আকাশের নিচেও রাত্রী যাপন করতে হয়। এ অবস্থায় এলাকার ধনী ও বিত্তবান মানুষকে তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। শীতার্ত মানুষের পাশে সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালী ব্যক্তি সাহায্য ও সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিলে শীতার্ত মানুষের কল্যাণ করা হবে। কেন না ওই হতদরিদ্ররা প্রশাসন কিংবা সরকারের কাছে পৌঁছতেই পারেন না। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজকর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে তাদের সহায়তায়। প্রতি বছরই পরোপকারী মানুষ নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবায় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন
এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে যতটা সম্ভব প্রত্যেকে এগিয়ে এলে বেশিসংখ্যক মানুষ সহায়তা পাবেন। আমাদের উচিৎ প্রত্যেকে অন্তত একজন শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।
তীব্র শীতের প্রকোপে নিদারুণ কষ্ট ও দুঃসহ অবস্থায় পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে দেশের লাখ লাখ দুস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, গরিব, দুঃখী, বস্ত্রহীন শিশু ও বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। সড়কের পাশে, বাস ও রেলস্টেশন এবং বাজার ও রাস্তাঘাটে রাতের বেলা ছিন্নমূল অসহায় মানুষকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আমরা ইচ্ছা করলে এসব মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে দিতে পারি। এতে তারা যেমন স্বস্তি পাবেন, তেমনই সহায়তাকারীর মনেও প্রশান্তি আসবে। এর জন্য অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার প্রয়োজন নেই।
এ দিকে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। এ থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন সুচিকিৎসা, ওষুধপথ্য ও শীত মোকাবিলায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে কার্যকর উদ্যোগ। বিশেষ করে শিশুরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে শীতের দুর্ভোগে মৃত্যুর হারও বাড়তে পারে। তীব্র শীত নিবারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে ও সাংগঠনিকভাবে শীতবস্ত্র বা গরম কাপড় এবং ওষুধপথ্য সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, ব্যবসায়ীসহ সামাজিক স্বেচ্ছাসেবামূলক সংস্থা ইচ্ছা করলে নিজ এলাকার শীতার্ত অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে পাঠাতে পারেন।
প্রত্যেক সংবেদনশীল ও মানবিকতা বোধসম্পন্ন মানুষের উচিত বিপদগ্রস্তকে যথাসাধ্য সাহায্য করা। সবাই নিজ অবস্থান থেকে সমন্বিতভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করলে শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।